Sunday, September 9, 2012

সোনালী ফুলের ফোয়ারা



The Art & Science of making fire fountains / তুবড়ি তৈরীর কলা কৌশল
কালীপুজো এলেই বাজির জন্য মন কেমন করে| বাজারে বাজির যা দাম, তাতে এমনিতেই আগুন ধরে যাবার মত| এত পয়সা খরচ করে সন্দেহ যায়না, বাড়ি গিয়ে বাজি বাজে বেরোবে কি না| একবার রাস্তায় দেখেছিলাম কয়েকটি তরুণ অতি উসাহে তুবড়ি জ্বালাচ্ছে| তুবড়িগুলোর করুণ অবস্থা দেখে, কাছে গিয়ে প্রশ্ন করলাম, কোথা থেকে কিনেছে| তারা সদর্পে জানালো এগুলো নিজেরাই বানিয়েছে| ছটাক খোলের তুবড়িগুলো থেকে কিছু ফুলকি বহু কষ্টে এক তলা পর্য্যন্ত ঠেলে উঠছে|
ঝাড়ের কোনো ঘনত্বই নেই| জ্বলন্ত ফুল প্রায় নেই, উঠে তারপর মাটিতে পড়া তো দূরস্থান (সাদা কালো ছবি, বাঁয়ে)
কোনোটা ভচ্ ভচ্ করে অসমান ভাবে উঠছে, ঠাসা ঠিক হয়নি (মাঝে)
কোনোটা পুরো তেজ পৌঁছবার আগেই ফেটে যাচ্ছে, বেশী ঠাসা হয়ে গেছে বা মশলায় সোরা বেশী হয়ে গেছে (ডাইনে)
নিকটবর্তী চল্লিশোর্ধ এক যুবককে দেখিয়ে তরুণরা বলল 'দাদা শিখিয়েছে'| 'দাদা' বিরাট আত্মপ্রসাদের সঙ্গে জানালেন, যে তিনিই পন্ডিত ও তিনিই এদের বাজি বানাতে শিখিয়েছেন| কি লাভ এই বলে যে ছটাক খোলের তুবড়ি অন্ততঃ দোতলা পর্য্যন্ত ওঠা উচিত, শুধু মাত্র ফুলকির নয়, সঙ্গে প্রচুর ফুল ফোটা উচিত? বাঙালি বিশারদকে জ্ঞান দিতে যাওয়া বিপজ্জনক, তাই দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফিরে এলাম| এতগুলো উসাহি তরুণের উদ্দম জলে গেছে|



স্কুলে পড়ার বয়েসে, পাড়াতে মোটামুটি সমবয়েসী যারা ছিল, তাদের বেশীর ভাগেরই বাড়িতে অনেক ভাই, বোন| তাই তাদের তুবড়ি বানাবার লোকাভাব ছিল না| ঘুড়ি ওড়াতে, পায়রা ওড়াতে, পায়রা ও রঙ্গীন মাছ কিনতে হাটে যেতে সমবয়েসীরা সহযোগী ও প্রতিযোগী দুইই হত, কিন্তু বাজি বানাতে জনবল বলতে আমি একা| জানিনা আজকাল কিশোর আর তরুণরা নিজের হাতে তুবড়ি বানাতে উসাহী কি না| তবে এইটুকু বলতে পারি, নিজে বানালে খরচ অনেক কম| আমার স্কুল জীবনের সময় প্রায় ৫ ভাগের এক ভাগ খরচ পড়ত, দেখতেও ঢের ভালো হত| যদি কোনকালে কারো কোনো কাজে লাগে, সেই আশায় এইখানে তুবড়ি তৈরীর প্রণালী লিখে রাখলাম|

আগেই বলে রাখি, তুবড়ি করা বেশ শ্রমসাধ্য| হ্যাপাও অনেক| কালীপুজোর ঠিক আগে যদি বৃষ্টি হয়, তো তুবড়ির ভেতরে থাকা লোহাচুরেও মরচে পড়ে যায়| তাতে তুবড়ির ঝাড় কমে যায়, আর ফুলগুলো সোনালী হবার বদলে তামাটে রং হয়ে যায়, তুবড়ির তেজও কমে যায়| কাঁচামাল যোগাড়ও অনেক আগে থেকে করতে হয়| আগে লিখছি তুবড়ি ও মশলার রকমফের| পরে ক্রমানুপাতিক ভাবে কার পর কি করলে সঠিক হয়| বাজারে বিভিন্ন বছরে তুবড়ির মশলা বিভিন্ন বিশুদ্ধতায় পাওয়া যায়| ফলে তার থেকে তুবড়ি বানাতে হলে মশলাগুলোর আনুপাতিক ওজন দরকার মত একটু বদল করতে হয়| সোরা কিনে সোজা ব্যবহার করলে বা পরিশোধন করে নিলে তুবড়ির তেজের তারতম্য হয়| কেরোসিন দিয়ে ঠাসলে তুবড়ির তেজ বেড়ে যায়, খোল ভালো না হলে ফেটেও যেতে পারে| লোহাচুর কম বা বেশী দিলে কিম্বা লোহাচুরের ছোট বা বড় দানার আনুপাতিক অনুযায়ী তুবড়ির ঝাড়ের ধরনটাই পাল্টে যায়| এখানে একটা গড়পরতা হারের মিশেল দিলাম| নিজের পছন্দসই মিশেল দিয়ে দু একটা তুবড়ি আগে বানিয়ে পরখ করে ঠিক করেতে হয় কোনটা ভালো লাগছে| সেটা ঠিক হলে তবেই সব তুবড়িগুলো ঠাসতে হয়| প্রতিযোগিতায় যাবে কি না, তুবড়ি ছাদে রেখে না মাটিতে রেখে জ্বালানো হবে, এ সব অনুযায়ী আলাদা আলাদা মিশেলের তুবড়ি বানিয়ে গায়ে দাগ দিয়ে রাখা যায়, যাতে পরে চেনা যায়, কোনটা কি| তুবড়ি পুরনো হলে তেজ কমে যায়| সাধারণ ভাবে বলা যায়, কালী পুজোর আগের দিন তুবড়ি বানিয়ে রেখে ভাই ফোঁটার দিন সেগুলো জ্বালালে তত জেল্লা থাকবে না| বেশী হলে তুবড়ির সব উপাদানই পরের বছর ব্যবহার করা যায়, একমাত্র লোহাচুর ছাড়া|

তুবড়িতে লাগে লোহা, সোরা, গন্ধক আর কাঠকয়লা| লোহার কাজ হলো ফুল আর ফুল্কিগুলো সৃষ্টি করা| গন্ধকের কাজ তাপ বাড়ানো, যাতে লোহায় আগুন ধরে যায়| সোরার কাজ হলো খোলের মধ্যে উচ্চচাপ সৃষ্টি করা, যাতে জ্বলন্ত লোহার ফুলগুলো আগ্নেয়গিরির লাভার মত সজোরে উক্ষিপ্ত হয়| কাঠকয়লার কাজ হলো আগুনটাকে জ্বালিয়ে রাখা, নিভতে না দেওয়া| সোনালী তুবড়ি রপ্ত হলে, অ্যালুমিনিয়াম, শাঁখচুন, মোমছাল, পটাশ (Potash, KClO3), বেরিয়াম (Barium), স্ট্রন্শিয়াম (Strontium), ইত্যাদী নানাপ্রকার রাসায়নিক সহযোগে নানা রকম রং আনা যায় - কোনটাই তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয় বলে বিশদভাবে কিছু লিখলাম না|

(বাঁয়ে) তুবড়ি উঁচুতে উঠছে, ঝাড় ঘন কিন্তু কোনো ফুলই নেই
(ডাইনে) ঝাড় পাতলা, ফুল খুব কম, তুবড়ি পুরনো হয়ে গেলে এই রকম হয়

উপাদান : ১ কিলো সোরা সহযোগে যা বাজি হয়, তার হিসাব দিলাম| বাজার থেকে এইগুলো কিনে নাও,
এক কিলো সোরা
দেড় কিলো লোহাচুর| লোহা কাটার দোকান থেকে পেলে ২ কিলো এন
৪০০ গ্রাম গন্ধক
৪০০ গ্রাম কাঠ কয়লা
১০ টা পোয়া খোল বা
 ২০ টা অধপোয়া খোল বা ৪০ টা ছটাক খোল
পারস্পরিক মাপ সমানুপাতিক রেখে মশলা কম বা বেশী করে নেওয়া যেতে পারে|


খোল : বাজারে মশলা বিক্রি হয় কিলোতে, কিন্তু তুবড়ির খোল বিক্রি হয় সেই পুরনো পোয়া, ছটাক মাপে| খোল নানা মাপে পাওয়া যায় - ছটাক, আধ পোয়া, পোয়া| খোল কেনার সময় বাজিয়ে দেখে নিতে হয়, ফাটা কি না, ভালো পোড়া কি না - মানে, লোহাকে সজোরে উক্ষিপ্ত করবার মত চাপ আর তাপ সহ্য করতে পারবে কি না| খোলের মুখের ফুটো ছোট হলেই ভালো, দরকার হলে, পরে কেটে বড় করে নেওয়া যায়| পোয়া খোল এমনও পাওয়া যায়, যার মুখের মাটিটা মোটা করা থাকে, যাতে বেশী চাপ সহ্য করতে পারে - এইগুলোর দাম একটু বেশী, কিন্তু অনেক উঁচু পর্য্যন্ত উঠতে পারে| অনেক প্রতিযোগিতায় এই মুখ মোটা খোল ব্যবহার করতে দেয় না, আগে থেকে খোঁজ নিয়ে রাখা ভালো| তুবড়ি তৈরী ও পরীক্ষা করার সময় কিছু খোল নষ্ট হয়, তাই কিছু বেশী কেনা ভালো| যদি দেখো তুবড়ির তেজ পুরো পৌঁছাবার আগেই একটুর জন্য খোল ফেটে যাচ্ছে, তবে জ্বালাবার ঠিক আগে, দু হাতের চেটোর মাঝখানে তুবড়িটার মুখ আর নিচটা চেপে ধরে এক বালতি জলে ঝপ করে চুবিয়েই তুলে নাও| তৎক্ষনাৎ আগুন লাগাও| খেয়াল রেখো, যেন উপরে মুখ দিয়ে মশলায় জল না ঢুকে যায়, জল যেন শুধু খোলের গায়ে লাগে| যারা ওস্তাদ, তারা খোল বাজারে এলেই তাড়াতাড়ি গিয়ে বেছে কিনে বাড়িতে এনে রেখে দেয়| যদি ভালো খোল নিতান্তই না পাও, খোল যদি বার বার ফেটে যায়, তবে একটা মোটা কাপড়ের টুকরো ভিজিয়ে রাখো| প্রত্যেকটা তুবড়ি জ্বালবার আগে, সেটা খোলের গায়ে চাদরের মত করে জড়িয়ে দাও| এতেও যদি কাজ না হয়, তবে মশলায় সোরার ভাগ কমিয়ে দাও| তুবড়ি ফাটবে না, কিন্তু উঠবে কম| ০.৯৩৩১০ কিলো = ১ সের = ৪ পোয়া = ১৬ ছটাক| ১ কিলো সোরা (পরিশোধিত হলে ৮০০-৯০০ গ্রাম) দিয়ে মোটামুটি ২ কিলো মশলা তৈরী হবে| তার জন্য চাই সম পরিমান খোল| মানে, ২ কিলো মশলা দিয়ে ৯ / ১০ টা পোয়া খোল বা ৩৫ / ৪০ টা ছটাক খোল ভরা যাবে|
মশলা : লোহাচুরের তুবড়ি থেকে সোনালী রঙের ফুলের ফোয়ারা বেরয়, অনেক দূর ওঠে আবার মাটি পর্য্যন্ত নেমে আসে| তার বাহারই আলাদা| অ্যালুমিনিয়ামের তুবড়ি থেকে রুপোলী ফুলকি ওঠে, কিন্তু বেশীদূর উঠবার আগেই অ্যালুমিনিয়াম জ্বলে শেষ হয়ে যায়, ফুল আর কাটে না, ফিরে এসে মাটিতে পড়া তো দুরের কথা| অ্যালুমিনিয়ামের রুপোলী তুবড়ি সহজেই বাজারে কিনতে পারা যায়, লোহাচুরের সোনালী তুবড়ি সহজে পাওয়া যায় না| বেশী উঁচু ওঠে বলে, সাধারণত লোহাচুরের তুবড়িই প্রতিযোগিতায় ব্যবহার হয়| তাই, আমি কেবল লোহাচুরের তুবড়ি তৈরীর প্রণালীই লিখছি তুবড়ির সমস্ত মশলাই সাধারণত বাজারের দশকর্ম্ম ভান্ডারে পাওয়া যায়| কালীপুজোর কিছু আগে, অনেক সময় আলাদা করে বাজি ও বাজির মশলার দোকানও বসে|
সাবধানবাণী  :
১. যে শিলে নোড়ায় বা হামন দিস্তায় পটাশ বাটা হয়েছে, তাতে কখনই গন্ধক বাটবে না, ফাটতে পারে| আগে সোরা বাটবে, তারপর শিল ভালো করে শুকনো brush বা ছোবড়া দিয়ে ঝেড়ে নিয়ে কাঠ কয়লা বাটবে| পরে, শিল আবার ভালো করে শুকনো করে ঝেড়ে নিয়ে গন্ধক বাটবে| মনে রেখো, সোরা + গন্ধক + কাঠ কয়লা, এই হলো বন্দুকের বারুদ বা gunpowder, অর্থাৎ খুবই বিস্ফোরক|
২. যেখানে বাজি তৈরী হচ্ছে তার কাছেপিঠেও যেন কোনো খোলা আগুন না থাকে| সিগারেট বিড়ি যে খাবে, সে একেবারে দুরে গিয়ে ভাটির বাতাসে (downwind) খাবে, যাতে কোনো জ্বলন্ত ফুলকি উড়ে এসে না পড়তে পারে|
৩. মশলা ছাঁকবার সময় অতি অবশ্য মুখ আর নাক কাপড় দিয়ে বেধে নেবে| গুঁড়ো ফুসফুসে যাওয়া ভালো না|
৪. তুবড়ি তৈরী বা জ্বালবার সময় কেবল মাত্র সুতির পোশাক পরে থাকবে| Nylon, terelene, ইত্যাদী petroleum জাত তন্তুর কাপড় কখনই নয় - এগুলোতে আগুন লেগে গেলে, কাপড় চামড়ায় কামড়ে বসে যায়, জল ঢেলেও সুরাহা নেই| সুতিতে আগুন লাগলেও, আলাদা হয়ে আস্তে আস্তে জ্বলে, জল ঢেলে নিভাবার সময় পাওয়া যায়|
৫. প্রথম তুবড়িটা জ্বালবার আগে, পাশে একটা বড় লোহা, অ্যালুমিনিয়াম, পিতল বা মাটির (প্লাস্টিকের কখনই নয়) পাত্রে অর্দ্ধেকটা জল ভরে রাখো| প্রত্যেকটা তুবড়ি জ্বলে শেষ হয়ে গেলে, একটা লন্বা চিমটে বা লোহার কাঠি দিয়ে তুলে জলে ফেলে দিও| জ্বলা তুবড়িও ভীষণ গরম| সেটা জলে পড়লেই জল ঠিকরে ফুটে উঠবে| তাই ফেলবার সময়ে একটু দুরে দাঁড়িও, নয়তো ফুটন্ত জলের ফোঁটা গায়ে পড়তে পারে|
৬. জ্বালবার আগে পর্য্যন্ত সব তুবড়ি একটা ধাতুর ঢাকার নিচে রাখবে, যাতে অন্য কারোর বাজি থেকে ফুলকি না এসে পড়ে| যেমন যেমন দরকার, একটা একটা করে বার করে নেবে|
৭. তুবড়ি জ্বালবার সময় বাচ্চারা যেন এত কাছে না থাকে যে তুবড়ি ফাটলে গায়ে আগুন এসে পড়তে পারে|
৮. একটু খাবার সোডা আর Burnol জাতীয় ওষুধ কাছে রাখবে| যদি কোনো কারণে গায়ে আগুনের ফুলকি পড়ে, তবে তখুনি প্রথম একটু খাবার সোডা লাগিয়ে দেবে, তারপর ঠান্ডা জলে ধুয়ে Burnol লাগিয়ে রাখবে| আগে থেকে ঠিক করে রাখবে, বেশী পুড়ে গেলে নিকটতম কোন ডাক্তার বা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়| বেশী পুড়ে গেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিসা আবশ্যক, নইলে চিরকালের মত চামড়ায় বিশ্রী দাগ থেকে যেতে পারে বা মৃত্যু পর্য্যন্ত হতে পারে|
৯. ছাদে রেখে জ্বালাবার আগে নজর রাখবে নিচে যেখানে ফুলকি পড়বে সেখান দিয়ে কেউ যাচ্ছে কি না|
১০. যদি রান্নাঘরের শিল নোড়া নিতে হয়, তবে আগে বাড়ির গিন্নির অনুমতি অবশ্যই নেবে| তুবড়ির কাজ শেষ হলে প্রথমে ভালো করে জল দিয়ে ধোবে| তারপর একবার কাপড় কাচার সাবান লাগিয়ে ছোবড়া দিয়ে ভালো করে ঘষে, পরে জল দিয়ে ধোবে| শুকিয়ে গেলে শুঁকে দেখবে কোনো বারুদের গন্ধ আছে কি না| থাকলে আবার ধোবে| তারপরই শিল রান্নাঘরে ফের দেবে| অন্যথায় বাড়িতে ধেড়ে বয়েসেও পিটাই খাবার ভয় আছে আর জন্মের মত তুবড়ি বানানো ঘুচে যাবে|


লোহাচুর : লোহাচুরের খানিকটা নষ্ট হয়, তাই একটু বেশী কেনা ভালো| কেনা ১ কিলো সোরার জন্য ৬০০ থেকে ৮০০ গ্রাম পর্য্যন্ত ছাঁকা লোহাচুর ব্যবহার হতে পারে| বেশী লোহা দিলে তুবড়ি ভারী হয়ে যাবে, কম উঁচুতে উঠবে, কিন্তু ঘন ঝাড় হবে আর বড়ো বড়ো ফুল কাটবে, বাহার বেশী হবে| কম লোহা দিলে তুবড়ি হালকা থাকবে, উঁচুতে উঠবে, কিন্তু ঝাড় কম হবে| একটু কম বা একটু বেশী লোহাচুর দিয়ে দু একটা তুবড়ি আগে বানিয়ে পরীক্ষা করে পছন্দসই মাপ ঠিক করে নিও| পাড়ায় যদি লোহা কাটার দোকান থাকে, তবে মালিকের সঙ্গে আলাপ করে অন্ততঃ ২ কিলো লোহার ছাঁট চেয়ে নিতে পার| কিনেও নিতে পার, বাজারের চেয়ে অনেক সস্তা পড়বে| Lathe machine-এ কাটা ছাঁটের চেয়ে করাতে কাটা ছাঁট পেলে ভালো, গুঁড়ো করতে সুবিধা হয়| যদি কালী পুজোর অনেক আগে লোহা আনো (তোমার মত আরো অনেকে লোহা কাটার দোকানে ধরনা দেবে), তবে ছাঁট লোহাকে আর্দ্র বাতাসে মরচে পড়া থেকে বাঁচাতে অল্প কেরোসিন ভালো করে মাখিয়ে দুই ভাঁজ polythene-এ মুড়ে রেখে দিও| ব্যবহারের আগে, রোদে ফেলে ভালো করে শুকিয়ে নিও| কেরোসিনটুকু এমনিতেই উবে যাবে| একটা শুকনো কাপড়ে লোহা ভালো করে রগড়ে নাও| কুলোয় ঝেড়ে নাও| সব চেয়ে বেশী গুঁড়োর সঙ্গে ধুলো আর মরচেগুলো বেরিয়ে যাবে, ফেলে দাও| যদি দেখো লোহার দানাগুলো বেশী বড়ো, তবে হালকা করে হামন দিস্তায় ভেঙ্গে নাও| করাতের লোহা সাধারণত ভাঙ্গতে লাগে না| লেদ মেশিনের লোহা হলে অনেক সময় প্যাঁচ হয়ে বেরিয়ে আসে, তাই একটু ভাঙ্গতে হয়| মাঝারি আর মোটা ছিদ্রের দুটো চালুনি যোগাড় কর| দুটো চালুনিতে ছেঁকে বড়ো দানা, ছোট দানা আলাদা করে নাও| এবার, বড়ো দানা আর ছোট দানা ১:১, ১:২ আর ১:৩ অনুপাতে অল্প অল্প মিশিয়ে তিনটে ছোট ছোট স্তুপ করে, আবার আগের মত হালকা কেরোসিন মাখিয়ে ডবল করে মুড়ে রাখো| সন্ধ্যা হলে, এই তিনটে মিশ্রণ দিয়ে, বেশী লোহা আর কম লোহা দিয়ে নানা রকম ভাবে মশলা মিশিয়ে ৩ / ৪-টে তুবড়ি বানিয়ে জ্বালিয়ে দেখো কি রকম তোমার পছন্দ| আমি দোতলা বাড়িতে থাকতাম, তাই বেশী করে মোটা দানার লোহা এমন মিশেল দিতাম, যে ছাদের কার্নিশে রেখে জ্বালালে ফুলগুলো ফোয়ারার মত উঁচুতে উঠে আবার দোতলা নিচে মাটি পর্য্যন্ত নেমে গিয়েও জ্বলত| প্রতিযোগিতায় মাটিতে বসিয়ে তুবড়ি জ্বালানো হয়, তাই তুবড়ির ফুলগুলো উঁচুতে উঠে আবার জ্বলতে জ্বলতে মাটি পর্য্যন্ত নেমে আসলেই যথেষ্ট, তার বেশী লোহা দিয়ে দরকার নেই|
সোরা : বাজার থেকে কিনে গুঁড়ো করে নিলেও চলে| বাজারের সোরায় কিছু ময়লা থাকে| সেই সোরা শোধন করে নিলে আরও ভালো হয়, তার তেজ বাড়ে| ১ কিলো সোরা একটা বড়ো ডেকচিতে বসিয়ে সিকি লিটার মত জল দাও| আগুনে বসিয়ে কাঠের হাতা দিয়ে নেড়ে নেড়ে গরমে গুলতে থাক| প্রয়োজনে একটু একটু করে জল বাড়াতে পার, যতক্ষণ না পর্য্যন্ত পুরো সোরাটা গুলে যায়| যথা সম্ভব কম জলে সোরা গুলবে| গোলা সোরাটা নামিয়ে ঠান্ডা হতে দাও| এতক্ষণে সোরার গাদ বা ময়লাটা ভেসে উঠবে| একটা ঘন জালের ছাকনি দিয়ে আস্তে করে উপর থেকে গাদটা চেঁছে তুলে ফেলে দাও| ঠান্ডা হলে সোরা আস্তে আস্তে কেলাসিত (crystalize) আর শুদ্ধ হয়ে যেতে থাকবে| শেষে অল্প জল পড়ে থাকবে, সেটা ডেকচি কাত করে আলাদা করে নাও| গাদ আর জল বেরিয়ে গিয়ে সোরা প্রায় ১০০-২০০ গ্রাম কমে যাবে| এই জল গাছের পক্ষে খুব ভালো সার, তবে অন্ততঃ ২০-গুন জল মিশিয়ে, লঘু করে তবেই দেওয়া উচিত| কেলাসিত সোরা হালকা আঁচে শুকিয়ে নাও| খেয়াল রেখো যেন পুড়ে না যায়| এর পরে প্রথমে হামন দিস্তায় গুঁড়িয়ে পরে শিলে বেটে নাও| ভালো গুঁড়ো হলেই চলবে, মিহি হবার দরকার নেই| গুঁড়ো সোরাটা বাকি মশলায় মেশাবার আগে পর্য্যন্ত সর্বদা চড়া রোদে দিয়ে খট খটে শুকনো রাখবে|


গন্ধক : বাজারে চেনা দোকানদারের কাছে যে টুকরো বা গুঁড়ো গন্ধক পাওয়া যায় তা সাধারণত ভালই হয়| টুকরো গন্ধক হলে হামন দিস্তা ভালো করে গুঁড়ো করে নাও| মোটা কাপড়ে ছেঁকে ফেল| ছাঁকতে ছাঁকতে কাপড়ের সুতোগুলো যদি সরে যায়, ছাঁকা যদি আর ভালো না হয়, তাহলে কাপড়টা ফেলে আরেকটা কাপড় নাও, যাতে গন্ধক একেবারে talcum powder-এর মত মিহি হয়| একটা কাঁচ বা চিনামাটির পাত্রে ঢেলে রোদে রেখো| রোদ পড়ে গেলে, পরের দিন রোদ ওঠা পর্য্যন্ত পাত্রটার মুখ বন্ধ করে রেখো| ছাঁকার পর প্রায় ৩৫০ গ্রাম মিহি গুঁড়ো পাওয়া যাবে|


কাঠ কয়লা : কাঠ কয়লা যত হালকা হবে, বাজি তত ভালো| বাজির বাজারে শুধু সবচেয়ে হালকা কুল কাঠের কয়লাই পাওয়া যায়| যারা মফঃস্বল বা গ্রামাঞ্চলে থাকে, তারা অনায়াসে কুল কাঠ যোগাড় করে কয়লা বানিয়ে নিতে পার| নিতান্ত না পেলে বেগুন কাঠের কয়লা চলতে পারে| গন্ধকের মত কাঠ কয়লাও গুঁড়ো করে আর ছেঁকে একেবারে talcum powder-এর মত মিহি করে নেবে| ছাঁকার পর প্রায় ২৫০-৩০০ গ্রাম মিহি গুঁড়ো পাওয়া যাবে| কাঠ কয়লার গুঁড়ো ভীষণ হালকা| ভাঙ্গা, ছাঁকা এমন জায়গায় বসে করবে না যেখান দিয়ে হওয়া বইছে, না হলে অনেকখানি গুঁড়ো বাতাসে উড়ে গিয়ে নষ্ট হবে|
মাটি : তুবড়ির তলাটা বন্ধ করতে ১ কিলো মত এঁটেল মাটি নিয়ে শুকিয়ে, ভেঙ্গে গুঁড়ো বা প্রায় গুঁড়ো করে নাও| হামন দিস্তাতেও ভাঙ্গতে পার, তবে তার পরে হামন দিস্তা ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে নিও| তুবড়ি ঠাসার আগে পর্য্যন্ত মাটি সর্বদা চড়া রোদে দিয়ে খট খটে শুকনো রাখবে| শেষে তুবড়ি মাটির উপর রেখে ঠাসতে হয়, তাই অনেকটা মাটি বেশী রাখতে হয়|
আনুসঙ্গিক : বিভিন্ন ছোট ওজনের বাটখারা সমেত একটা নিক্তি - বাসনের দোকানে বা দশকর্ম্ম ভান্ডারে set হিসাবে পাওয়া যায়| একটা ভোঁতা ছুরি, একটা উল বোনার কাঁটা, একট ১ সেন্টিমিটার মত ব্যাসের কাঠের বা লোহার ছোট ডান্ডা| কিছু polythene-এর টুকরো, কিছু খবরের কাগজের টুকরো, গন্ধক আর কাঠকয়লা ছাঁকবার জন্য একট ১ হাত লম্বা আর চওড়া কাপড়| হাত ও তুবড়ি মোছার জন্য খানিকটা কাপড়| খুব সাবধানে ব্যবহার করতে পারলে, kerosene দিয়ে তুবড়ি ঠাসাটা সহজ হয়, কিন্তু সেটা আগে একটা বানিয়ে, জ্বালিয়ে পরখ করে নেওয়া ভালো| ঠিক হলে অল্প খানিকটা kerosene-ও লাগবে| পরিশোধিত সোরা আর কেরোসিন দিয়ে ঠাসা হলে, তুবড়ির তেজ বেড়ে যায়| খোল যদি যথেষ্ট শক্ত না হয়, তবে ঝাড় পুরো উঠবার আগেই খোল ফেটে যেতে পারে|
প্রণালী : সব মশলা গুঁড়ো করা, ছাঁকা, বাছা সব হয়ে গেছে? তবে মশলা পরীক্ষা করার জন্য প্রথম তুবড়িটা এইভাবে শুরু কর| মশলা হবে সোরা : লোহাচুর : গন্ধক : কাঠকয়লা = ১২ : ৮ : ৪ : ৪ অনুপাতে| নিক্তি আর ছোট বাটখারা দিয়ে এই রকম ওজনের মশলা মেপে আলাদা আলাদা করে রাখো,
৬ গ্রাম সোরা
২ গ্রাম ছোট দানার লোহাচুর
২ গ্রাম বড় দানার লোহাচুর
দেড় গ্রাম গন্ধক
দেড় গ্রাম কাঠকয়লা
ছোট আর বড় দানার লোহাচুর সঙ্গে ২ / ১ ফোঁটা কেরোসিন দিয়ে ভালো করে মেখে নাও| এবার গন্ধকটা ভালো করে মিশিয়ে রাখো| আলাদা করে কাঠকয়লা আর সোরা ভালো করে মিশিয়ে দাও| এবার এই দুটো মিশ্রনকে একত্র করে মিশাও| শুকনো বলে মশলাটা ভুষভুষে থাকবে| ফোঁটা ফোঁটা করে অল্প কেরোসিন দিয়ে মাখতে থাক, যতক্ষণ না মশলা একটু লেগে লেগে যেতে থাকে| ব্যাস, কেরোসিন দেওয়া বন্ধ কর| একটা ছটাক খোল নাও| ছুরি দিয়ে মুখটা মসৃন গোল করে চেঁছে নাও, যাতে প্রায় ৮-১০ মিমি মত হয়| খোল চাঁছা মাটির গুঁড়ো ঝেড়ে ফেল|

মুখটা একটা আঙুল দিয়ে চেপে ধরে, মশলাটা একটু একটু করে ভেতরে ভরতে থাক আর মাঝে মাঝে হালকা করে আঙুল দিয়ে চেপে দিতে থাক, যতক্ষণ না একদম পুরোটা ভর্ত্তি হয়ে যায়| এবার আঙুল দিয়ে তুবড়ি ঠাসা শুরু কর| যথেষ্ট হলে ১ সেন্টিমিটার ডান্ডাটা দিয়ে ভালো করে চেপে ঠাস| দেখবে মশলাটা মাঝখানে নিচু আর তুবড়ির গায়ের কাছে উঁচু হয়ে আছে| উলের কাঁটার সরু দিকটা দিয়ে তুবড়ির গায়ের উঁচু মশলাটা চেঁছে মাঝখানে নিয়ে এস| উলের কাঁটার মোটা দিকটা দিয়ে মোটামুটি সমান করে নাও| এতে মশলা তুবড়ির নিচটা থেকে প্রায় ৭-৮ মিমি মত ভিতরে থেকে যাবে| যদি কম হয়, আরো মশলা দিয়ে ঠেসে নাও| বেশী হলে, চেঁছে বার করে দাও| দু-একবার করলেই অভ্যেস হয়ে যাবে কি ভাবে একবারে ঠেসে মাপটা ঠিক রাখা যায়| এক তুবড়ি বার বার ঠাসলে অসমান হয়ে যায়, তাতে জ্বলবার সময় ভচ্ ভচ্ করতে থাকে| এমন হলে প্রতিযোগীতায় কোনো আশা নেই| এবার মশলার উপর কাগজের টুকরো চেপে চেপে বসাতে থাক, যতক্ষণ না পুরো মশলাটা ২ স্তর কাগজে সম্পূর্ণ ঢেকে যায়| ফাঁকা জায়গাটুকু শুকনো মাটি দিয়ে ভালো করে ঠেসে দাও, যাতে মাটিটা তুবড়ি নিচ থেকে একটু বেশী হয়ে থাকে| বাকি মাটির স্তুপের ওপর তুবড়িটাকে ধরে সজোরে চেপে ঘুরিয়ে মাটিটা সমান করে নাও| আধ ঘন্টা অপেক্ষা কর| এর মধ্যে কেরোসিনের বেশ খানিকটা খোলে শুষে যাবে, মশলাটাও বেশ সমান আঁট হবে| তুবড়ি তৈরী|


সুন্দর তুবড়ি, ঝাড় ফুল দুইই আছে - (বাঁয়ে)শুরু, (ডাইনে) মাঝ অবস্থায়

তুবড়িটা যথাসম্ভব উঁচু জায়গা, যেমন বাড়ির বা ছাদের পাঁচিলের উপর রেখে জ্বালাও| একটু দুরে দাঁড়িয়ে মনোযোগ দিয়ে দেখো জ্বলাটা কেমন হচ্ছে| সঠিক মশলার ভাগ, সঠিক ঠাসা যদি হয়, তবে মনে হবে তুবড়ি সগর্জনে রাগে কাঁপছে, এই ফাটল বলে, কিন্তু ফাটবে না| ছটাক খোলের তুবড়ি অন্তত দু-আড়াই তলা উঠবে| যদি লোহা একটু কম দেওয়া হয়, অথবা যদি খোল ভালো হয় আর সোরা, ঠাসা খুব ভালো হয়, তবে ৩-তলা পর্য্যন্তও উঠতে পারে|
ক. ঝাড় পছন্দসই হতে হবে, ফুল আর ফুলকি মোটামুটি সমান সমান হবে, ফুল উঁচুতে উঠে আবার মাটিতে পড়ে তখনো জ্বলবে| লোহার ব্যবহার নিয়ে আগে যা বলেছি, সেই অনুযায়ী লোহা বেশী, কম অথবা মোটা দানা, সরু দানার আনুপাতিক বদল করা যেতে পারে|
খ. জ্বলা শেষ হয়ে গেলে যদি মুখে বেশী গন্ধক গলে জমে থাকে, তবে গন্ধকের ভাগ কমাতে হবে| অল্প জমে থাকলে ক্ষতি নেই|
গ. তুবড়ি যদি অকারণে হঠাৎ নিভে যায়, তার মানে কাঠকয়লা বাড়াতে হবে|
ঘ. খোল যদি ভালো থাকে, তবু যদি তুবড়ি ফাটে, তবে সোরা কমাতে হবে| খোলের মুখটা আর একটু বড় করে চেঁছে দেখতে পার| কোনমতেই ফাটা বন্ধ করতে না পারলে, কেরোসিন ব্যবহার কোরো না, শুকনো ঠেস|
এর পরের গল্প সম্পূর্ণ তোমার হাতে| সব মশলা একটু উনিশ বিশ করে দেখতে পার, এ বছর যা মশলা পেয়েছ তাতে সবচেয়ে ভালো কি হয়| এমনিতেও এটা আসলে সোরা আর লোহার খেলা| ভাগটা মোটামুটি ওই ১২:৮:৪:৪-এর কাছাকাছি রেখে একটু বাড়িয়ে কমিয়ে দেখতে হয়, ঠিক কি হলে সবচেয়ে ভালো| আগেই বলেছি, মোটা আর সরু দানার লোহার অপুপাতিক ১:১, ১:২ বা ১:৩ করে পরীক্ষা কোরো, কোনটা তোমার ভালো লাগে|

আশা করি, কালী পুজোর আগের রাতের মধ্যেই তুবড়িগুলো তৈরী হয়ে যাবে| পরের সারাদিন তাদের রোদে শুকাতে রেখো| রোদ পড়ে গেলে আগে দু-ভাঁজ খবরের কাগজ, তার উপরে ১-ভাঁজ polythene দিয়ে মুড়ে রেখো, যতক্ষণ না বাজি জ্বালাতে চাও| এতে বাজিগুলো একটু গরম, শুকনো আর তাজা থাকবে| কেরোসিন আস্তে আস্তে তুবড়ির মাটিতে শুষে যাবে| পরদিন সকালে তুবড়ি ভেজা লাগছে দেখলে ঘাবড়িও না, ওতে কিছু দোষ হবে না| তুবড়ি তৈরী শেষ হলে, সাবান দিয়ে হাত ধোবে, পুরনো toothbrush আর সাবান দিয়ে নখের তলাগুলো পরিষ্কার করবে| Boroline, Lacto Calamine এই জাতীয় কিছু হাতে মেখে বাকি রাতটা কাটাবে| নয়তো ঠাসবার সময় গন্ধক, কয়লা, কেরোসিন আর লোহার গুঁড়ো যা হাতের চামড়া ভেদ করে ঢুকে গেছে, পরদিন সকালে তারা সবাই মিলে দপদপ করে জানান দেবে, 'আমরা ছিলাম, আমরা আছি, আমরা থাকব'| মোটেই ভালো লাগবে না|

সুন্দর বাজি তৈরী করে সবাইকে আনন্দ দাও, সবাই তারিফ করুক, এই আশা নিয়ে শেষ করছি|

কৃতজ্ঞতা স্বীকার : ছবিগুলো সব আন্তর্জাল থেকে নেওয়া| বেশীর ভাগই http://firefountain.blogspot.in/ থেকে| যদি সেটা এখনও চালু থাকে, তবে দেখে নিতে পার, সেখানে আরো কিছু ছবি ছিল|

No comments:

Post a Comment